১৫টি রোগ নিরাময়ে নিম ও নিম পাতার ব্যবহার
নিম গাছ এমন একটি বৃক্ষ যার ডাল, পাতা, ফল সবই কাজে লাগে শুধু মিম দিয়েই নিরাময়
হয় অনেক রোগ। নিমের পাতা থেকেও আজকাল তৈরি হচ্ছে অনেক প্রসাধনী। কীটনাশক হিসেবে
নিম্নের রসের গুরুত্ব পরিসীমা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা সংক্রমণ সহ অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ করা যায় নিম পাতার
মাধ্যমে। নিম পাতায় থাকা এন্টি মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্ড ট্রি ভাইরা্ এবং এন্ট্রি
অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে।
সূচিপত্রঃ ১৫টি রোগ নিরাময়ে নিম ও নিম পাতার ব্যবহার
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
- চুলকানি বা খোশ পাঁচড়া
- কৃমিনাশক
- ত্বক ভালো রাখতে
- রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে
- ছত্রাকের ইনফেকশন দূর করতে
- চুল সুন্দর ও উজ্জ্বল করতে
- খুশকি বিনাশে
- রক্ত পরিষ্কার করতে নিম পাতার রস
- বাত ব্যথা দূর করতে নিম এর ব্যবহার
- শরীর থেকে জন্ডিস দূর করতে
- এলার্জি দূর করতে
- শরীর থেকে ক্ষত নিরাময়
- দাঁত ভালো রাখত
- উপসংহার
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
নিম পাতার অনেক গুণ রয়েছে। বিশেষ করে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
নিম পাতায় রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তার মধ্যে একটি হচ্ছে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। পূজা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী রাখতে সহায়তা
করে।
একই সঙ্গে নিম পাতা দেহের অভ্যন্তরে উপস্থিত অস্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকেও মেরে ফেলে।
এটি পেট পরিষ্কার রাখে এবং ত্বকের জন্য কার্যকর। নিম পাতা ভজনার কাজও করে থাকে।
নিম পাতার রস ডায়াবেটিস, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে
নিম গাছের কান্ড, মূল বাকল এবং কাঁচা ফল সব ধরনের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
মিমের ছাল ও গ্রাম অঞ্চলে ত্বকের রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি এমন একটি
ওষুধ যা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ গুলোকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে এবং টি রক্ত
সঞ্চালন ঠিক রাখে।
চুলকানি বা খোশ পাঁচড়া
নিম পাতা সিদ্ধ করে সেই জল দিয়ে গোসল করলে শরীরে খোশ পাঁচড়া রোগ চলে যায়।
নিমপাতা বা ফুল বেটে গায়ে কয়েকদিন লাগালে চুলকানি ভালো হয়। পাতা ভেজে গুড়া
করে সরিষার তেল মিশিয়ে চুলকানিতে লাগালে চুলকানি ভালো হয়ে যায়।
নিম পাতার সাথে সামান্য হলুদ নিয়ে সংক্রান্ত স্থানে সাত থেকে ১০ দিন ব্যবহার
করলেখোশ পাঁচড়া ও চুলকানি ভালো হবে। নিম পাতা দিয়ে ভেজে সে ঘি হতে লাগালে ক্ষত
অতি তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে এবং আপনি স্বস্তি লাভ করবেন।
কৃমিনাশক
শিশুদের সবচেয়ে বড় সমস্যা পেটে কৃমি হওয়া তাই পেটে কৃমি হলে শিশুরা রোগা হয়ে
যায়। বাচ্চাদের পেটের কৃমি নির্মূল করতে নিম পাতার গুরুত্ব অপরিসীম। শিশুরাই
সবচেয়ে বেশি কৃমিতে আক্রান্ত হয়।
তাই ৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ নিম গাছের মূলের ছাল গুড়া করে দিন তিনবার সামান্য গরম
জলসহ খেতে হবে আবার তিন থেকে চার গ্রাম নিমছাল সামান্য পরিমাণ লবণ সহকারে সকালে
খালি পেটে খেলে ক্রিমের উপদ্রব হতে রক্ষা পাওয়া যায় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এক থেকে
দুই গ্রাম মাত্রায় সেবন করতে হবে।
ত্বক ভালো রাখতে
মানুষ বহুদিন ধরে রূপচর্চায় মিমের ব্যবহার করে আসছে। তোকে দাগ দূর করতে এবং
মেছতা মুছতে নিম খুব ভালো কাজ করে। এছাড়াও এটি ত্বকের মরশ্চারাইজার হিসেবেও
খুব ভালো কাজ করে। বন্ধুর করতে আপনারা নিম পাতা বেটে লাগাতে পারেন।
খুব ভালো রাখতে আপনারা মিমের বড়ি বানিয়ে খেতে পারেন। বড়ি তৈরি করতে প্রথম যে
কাজ করতে হবে। তা হলো নিমপাতা আগে ভালোভাবে ধুয়ে বেটে নিতে হবে। এরপর মিমের
বড়ি তৈরি করতে হবে। পরের দিন রোদের শুকাতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে।
রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে
নিম পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চমৎকারভাবে কাজ করে। নিমের পাতা রক্তের সুগার
লেভেল কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও রক্তনালীকে প্রসারিত করে। ভালো
ফল পেতে নিমের কচি পাতার রস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে পারেন। সকালে খালি
পেটে ছয়টি গোল মরিচ ও ১১ টি নিমপাতা বেটে খেলে ডায়াবেটিস কমে যাওয়ার
সম্ভাবনা অনেক বেশি।
ছত্রাকের ইনফেকশন দূর করতে
আপনার শরীরের কোথাও যদি ইনফেকশন থাকে তাহলে নিমপাতা ব্যবহার করুন। নিম পাতার
ভেতরে এমন কিছু উপাদান আছে যা জীবাণুকে ধ্বংস করে। আপনি যদি নিম পাতার পেস্ট
বানিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান। তাহলে আপনার কত জায়গা অতি দ্রুত অফুরন্ত
জায়গা শুকিয়ে যাবে আবার আক্রান্ত জায়গায় কয়েক ফোঁটা মিনিট তেল দিনে তিনবার
লাগালে আপনারা খুব ভালো ফলাফল পাবেন।
চুল সুন্দর ও উজ্জ্বল করতে
আপনারা কি উজ্জ্বল, সুন্দর এবং দৃষ্টিনন্দন চুল পেতে চান তাহলে নিম পাতার
ব্যবহার করুন। নিম পাতা চুলে যাবতীয় সমস্যার সমাধান করে। যেমন, চুলের খুশকি
দূর করে। আপনি যদি চুলের গোষ্ঠী দূর করতে চান।তাহলে, চুলে শ্যাম্পু করার সময়
নিমপাতা সিদ্ধ জল দিয়ে চুল মাছ চাষ করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন তাহলে খুশকি দূর
হয়ে যাবে।
আবার প্রতি সপ্তাহে একদিন নিমপাতা ভালো করে বেটে চুলে লাগিয়ে এক ঘন্টা রাখুন।
এক ঘন্টা পর চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুল পড়া কমে গেছে এবং চুল
সুন্দর ও নরম হয়ে। মধু ও নিম পাতার রস একসাথে মিশিয়ে সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন
চুলে লাগানো এবার বিশ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন
দেখবেন। চুল ঝলমলে ও চকমক করছে।
খুশকি বিনাশে
চুলের খুশকি দূর করতে নিমপাতা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নিমে ব্যাকটেরিয়া
নাশক ও ছত্রাকনাশক উপাদানের জন্য খুশকির চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নিম মাথার তালুর শুষ্কতা ও চুলকানি দূর করে থাকে। আপনার মাথার খুশকি দূর করতে
চার কাপ জলে এক মুঠো নিমপাতা দিয়ে গরম করতে হবে। যতক্ষণ না জলটা সবুজ বর্ণ
ধারণ করছে। এই জল ঠান্ডা হওয়ার পরে মাথার মাসে ভালো করে দিন কিছুক্ষণ পর
শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করতে থাকুন। দেখবেন আপনার
মাথার খুশকি দূর হয়ে গেছে।
রক্ত পরিষ্কার করতে নিম পাতার রস
নিম পাতার রস রক্ত পরিষ্কার করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। এছাড়াও রক্ত
চলাচল বাড়িয়ে হৃদপিন্ডের গতিকে স্বাভাবিক রাখে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে মিমের
কোন জুড়ি নেই। আবার নিম পাতার রস প্রতিদিন একটি মানুষ পরিমাণমতো পান করলে তার
শরীরের সকল সমস্যার সমাধান করে।
ঠান্ডা জনিত বুকে ব্যথা
অনেক সময় আমাদের বুকে কফ জমে বুক ব্যথা করে। এর জন্য ২০ থেকে ৩০ ফোটা নিম
পাতার রস সামান্য গরম জলেতে মিশিয়ে দিলে তিন থেকে চারবার খেলে বুকের ব্যথা
কমবে। গর্ভবতীদের জন্য এই ওষুধটি প্রযোজ্য নয়।
বাত ব্যথা দূর করতে নিমের ব্যবহার
বাত ব্যথার ওষুধ হিসেবে কাজ কর নিমপাতা, নীমের বীজ ও বাকল। বাতের ব্যথায় নিমের
তেল ম্যাসাজ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাত ব্যথায় নিমের কোন তুলনা
হয় না নিম পাতার রস হালকা গরম করে ব্যথার জায়গায় লাগালে ব্যথার উপশম হয়।
শরীর থেকে জন্ডিস দূর করতে
মানুষের শরীরে জঙ্গি শক্তি ভয়ানক রোগ কারণ জন্ডিসের ফলে লিভারের সমস্যা দেখা
দেয়। জন্ডিস হলে প্রতিদিন সকালে একটু মধুর সাথে নিম পাতার রস মিশিয়ে খালি
পেটে খেতে হবে। ২০ থেকে ৩০ ফোঁটা নিম পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে সকালে খালি
পেটে খেলে জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। জন্ডিস পুরোপুরি নিরাময় হতে এটি এক
সপ্তাহ চালিয়ে যেতে হবে।
এলার্জি দূর করতে
আমাদের প্রত্যেকের শরীরে কমবেশি এলার্জি রোগটি বাসা বাঁধে। তাই শরীর থেকে
এলার্জি দূর করতে পরিমাণ মতো পানি নিন। এরপর সেখানে কিছু নিম পাতা দিয়ে
ফুটিয়ে নিন। ওটাতো পানিতে ঠান্ডা হয়ে গেলে সে পাটি দিয়ে গোসল করুন। দেখবেন
আপনার শরীরের এলার্জি জাতীয় সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও একটু নিম পাতা ও
কাঁচা হলুদ বেটে শরীরে লাগাতে পারেন এতে করেও এলার্জি জনিত সমস্যার সমাধান হবে।
শরীর থেকে ক্ষত নিরাময়
নিমপাতা মানুষের জীবনে বিভিন্ন সময়ে কাজে আসে। নিম পাতার অবদানকে আমরা কখনো
ভুলতে পারবো না। মানুষের শরীরের যখন ক্ষতের সৃষ্টি হয় তখন ক্ষত নিরাময় করতে
নিম পাতার দরকার হয়। ক্ষতস্থানে নিম পাতা বেটে নিমপাতা রস দিলে ক্ষত জায়গা
খুব তাড়াতাড়ি সেরে যায়। এবং ক্ষত থেকে জীবাণু দূর হয়।.
দাঁত ভালো রাখত
প্রাচীনকাল থেকে মানুষ দাঁত কে ভালো রাখতে নিমের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করে থাকে।
নিমের পাতা চালের গুড়া কিংবা মিমের ডাল দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলে দাঁত থাকবে
মজবুত রক্ষা পাবে সব রোগ থেকে। নিম পাতার নির্যাস জলেতে মিশে বা নিম পাতার রস
দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেললে দাঁতের আক্রমণ্ দাঁতের পচন রক্ত পড়া মাটি
ব্যথা এবং দাঁত ফুলে যাওয়া ইত্যাদি রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
উপসংহার
নিম হচ্ছে একটি ভেষজ বৃক্ষ যা ভুল বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। নিম গাছের পাতা
এবং নিম আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ সারাতে সাহায্য করে। কিন্তু অতিরিক্ত
ব্যবহারে আমাদের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়। তাই আমরা পরিমাণ মতো
নিম এবং নিম পাতার রস ব্যবহার করব। পরিমাণের অতিরিক্ত কোন জিনিসই মানুষের জীবনে
ভালো কিছু বই আনতে পারেনা।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url