গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি

গাজরের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ক্যারোট। গাজরের মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে যা আমাদেরকে সুন্দর এবং আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। আধুনিক বিজ্ঞান গাজরের উপকারিতা সম্পর্কে অনেক কথাই বলেছেন।

তাই গাজরকে পরিবারের সকলে ব্যবহার করতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে, গাজর স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গাজরের মধ্যে অনেক পুষ্টিকর উপাদান আছে। এর মধ্যে ভিটামিন এ ভিটামিন সি ভিটামিন কে এবং পটাশিয়াম আয়রন অন্যতম।

সূচিপত্রঃ গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি

  • গাজরের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।
  • দৃষ্টিশক্তি বাড়তে সাহায্য করে।
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • লিভারের জন্য গাজর।
  • ত্বক সুন্দর করার জন্য গাজর
  • গাজর অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে
  • হৃদরোগের জন্য গাজরের উপকারিতা
  • ওরাল স্বাস্থ্যের জন্য গাজরের উপকারিতা
  • কৃমি রোগের জন্য গাজরের উপকারিতা
  • স্ট্রোকের ঝুঁকি কমতে গাজরের উপকারিতা
  • গাজরের অপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
  • মন্তব্য

গাজরের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

আমাদের শরীরে ভিটামিন এ এর ঘাটতি পরলে ভিটামিন এ এর জন্য ওষুধ সেবন করি। কিন্তু আমরা জানি না একটি লাল রঙের গাজরে কি পরিমান ভিটামিন এ থাকে বা কি কি উপাদান থাকে। এবার তা আমরা এক ঝলকে জেনে নি।

১০০ গ্রাম কাঁচা গাজরে যে পরিমাণে পুষ্টি উপাদান গুলো পাওয়া যায় যেমন, কার্বোহাইড্রেট নয় গ্রাম, চিনি 6 গ্রাম, ফ্যাট ০.২ গ্রাম, প্রোটিন এক গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৩ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩৬ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ২৪০ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ২.৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ০.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৭ মিলিগ্রাম এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া।

দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে

আপনারা যদি আগে গাজর খেয়ে না থাকেন তাহলে এখন থেকে গাজর খাওয়া শুরু করুন। কারণ, গাজরের মধ্যে আছে প্রোটিন যা আমাদের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। বেটা ক্যারোটিন আমাদের লিভারে গিয়ে ভিটামিন এতে বদলে যায় এবং চোখের রেটিনায় গিয়ে চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

সেই সাথে রাতের বেলায় অন্ধকারে ভালো দেখার জন্য দরকারি এমন এক ধরনের বেগুনি পিগেন্ট এর সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়ে আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। এবং আমাদের চোখের যাবতীয় সমস্যা দূর করে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে

গাজর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কারণ গাজরে আছে Falcarionl যা আমাদের শরীরে অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান গুলোকে কলোরেক্টাল ক্যান্সার এবং প্রটেস্ট ক্যান্সার হওয়ার থেকে রক্ষা করে

বেশিরভাগ সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতিদিন দেড় কাপ গাজরের রস পান করলে আমাদের শরীর থেকে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায় এবং আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন আমাদের গাজর খাওয়া উচিত।

লিভারের জন্য গাজর খাওয়ার উপকারিতা

গাজরের মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ যা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এটি লিভারের পিত্ত এবং হিমাইত ফ্যাক্ট কমাতে সাহায্য করে থাকে।

গাজরের দ্রবণীয় ফাইবার প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় যা আমাদের লিভার এবং মলত্যাগের প্রক্রিয়াটিকে উদ্দীপনা দিয়ে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন একটি করে গাজর খেলে লিভারে প্রদাহ, ফলাফল ও সংক্রমণ কমে যায়। গাজর লিভারের হেপাটাইটিস, সিরোসিস এর মত জটিল সমস্যা থেকে লিভার কে রক্ষা করে।

ত্বক সুন্দর করার জন্য গাজর

আপনারা প্রতিদিন সুন্দর ত্বকের জন্য গাজর খেতে পারেন। এটা আপনার ত্বক কে ভেতর থেকে উজ্জ্বল ও সুন্দর করতে সাহায্য করবে। গাজরের মধ্যে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আপনার ত্বকের রোদে পোড়া পোড়া ভাব দূর করতে সাহায্য করবে।

এছাড়াও ভিটামিন এ ত্বকের ভাঁজ পড়া,কালো দা্‌ ব্রণ ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে থাকে। গাজরে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ থাকে যার ফলে আপনার ত্বক সুন্দর এবং উজ্জ্বল দেখাবে।

গাজর অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে

গাজর ভালো এন্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে থাকে আপনার শরীরের ভেতর কোথাও যদি কেটে যায়। তাহলে ইনফেকশন হওয়া থেকে আপনাকে রক্ষা করে বা আপনার শরীরে কোথাও যদি পুড়ে যায় সেখানে গাজরের রস লাগিয়ে দিন। ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কার থাকবে না।

হৃদরোগের জন্য গাজরের উপকারিতা

গাজর হৃদপিন্ডের নানা অসুখের একটি ভালো ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এর ক্যারোটিন হৃদপিন্ডের নানা অসুখের সমাধান করে থাকে। আবার মানুষের উচ্চতা বাড়াতেও গাজর খুব ভালো কাজ করে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতিদিন একটি গাজর খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৬৮ পার্সেন্ট পর্যন্ত কমে যায়।

ওরাল স্বাস্থ্যের জন্য গাজরের উপকারিতা

আপনি কি সুন্দর এবং সুস্থ সবল দাঁত চান তাহলে, আজ থেকে গাজর খাওয়া শুরু করুন। গাজর এমন একটি সবজি বা ফল যা খেলে আপনার মুখের লালা উৎপাদন বাড়াবে এবং প্রাকৃতিকভাবে এটি ক্ষারীয় কারণে মুখের মধ্যে এসিডের প্রভাবকে ভারসাম্যহীন করে তুলবে।

গাজর মুখের গন্ধ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করে। গাজরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে। যার ফলে সংযোগ টিস্যু, দাঁত এবং মাড়িকে ভালো রাখে এবং গাজর আপনার দাঁত ও মুখকে পরিষ্কার করে। গাজরের মিনারেল স আপনার দাঁত মজবুত থাকতে সাহায্য করে।

কৃমি রোগের জন্য গাজরের উপকারিতা

শিশুদের পেটে কৃমির সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। একটি গাজর কেটে ২০ থেকে ৪০ মিলি জুস তৈরি করে শিশুকে খাওয়ান. দেখবেন শিশু শ্রেণী থেকে মুক্তি পাবে. একটু ভালো থাকার জন্য আমরা অনেক কিছু করার চেষ্টা করি. যদি একটি যদি প্রতিদিন একটু করে গাজর খেয়ে আমরা সুস্থ থাকতে পারি তাহলে কেন সেটা করব না. তাই চলুন আমরা প্রতিদিন একটি করে গাজর খেয়ে নিজেকে সুস্থ রাখি.

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে গাজরের উপকারিতা

এমন কিছু উপাদান আছে যা মানব দেহের চোখের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে থাকে. বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের মতে, যারা প্রতিদিন একটি করে গাজর খেয়ে থাকে. তাদের স্ট্রোকের যুগে অনেক কমে যাবে. তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন একটি করে গাজা রাখা উচিত. তাহলে আমরা সুস্থ থাকতে পারবো তাই আপনিও প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় একটি করে গাজর রাখুন.

গাজরের অপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

যেহেতু গাজর সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্য উপকারী খাদ্য তাই আপনি কি এটি অধিক পরিমাণে ব্যবহার করছেন. গাজর একটু সুস্বাদু খাদ্য হলেও এটি পরিমান মত ব্যবহার করতে হবে। কারণ এর অতিরিক্ত ব্যবহার সম্পর্কে আপনার যদি ধারণা না থাকে তাহলে আপনি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে পারেন। নিচে তা উল্লেখ করা হলো,

প্রচুর পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন রয়েছে.যা আপনার শরীরে ভিটামিন এ এর ঘাটতি দূর করে। তবে, খুব বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে আপনার রং পরিবর্তন হতে পারে।অধিক পরিমাণ গাজর থেকে আপনার এলার্জি দেখা দিতে পারে।

আপনি যদি ডায়াবেটিসের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে কাঁচা অবস্থায় বা সিদ্ধ করে গাজর খাবেন না কারণ গাজরে অধিক পরিমাণ মিষ্টি থাকে. যার ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

প্রচুর পরিমাণে গাজর শিশুদের রং পরিবর্তন করে যেমন, শিশুদের গায়ের রং হলুদ হয়ে যায় শিশুদের অল্প বয়সে দাঁতের ক্ষয় দেখা দেয়। আবার প্রচুর পরিমাণে গাজর খেলে আপনার দেহে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি খনিজ গুলো শোষণের প্রভাব ফেলতে পারে।

আপনি যদি সঠিক পরিমাণে গাছও সেবন করেন তাহলে আপনার হজম শক্তির উন্নতি হতে পারে।   অন্যদিকে, এর চেয়ে বেশি পরিমাণ গাজর খেলে আপনার ডায়রিয়া, পেট, পাকস্থলী ইত্যাদির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মন্তব্য

গাজর আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।গাজন একটি সুস্বাদু সবজি বা ফল যা আমরা সবাই খেতে পছন্দ করি। গাজর খেলে আমাদের স্বাস্থ্য অনেক ভালো থাকে। তাই আমরা পরিমাণমতো গাজর খাব। গাজর যেমন আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে।তেমনি শরীরের সমস্যাও ডেকে আনে।তাই পরিমাণের অধিক গাজর খাওয়া ঠিক না। নিয়মমাফিক গাজর খাওয়ার চেষ্টা করব। উল্লেখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখুন এবং সুস্বাদু গাজর খেয়ে আপনার শরীরে রোগগুলোকে বিদায় জানান এবং সুস্থ থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url